অবিশ্বাসের দর্শন
(By অভিজিৎ রায়)


Size | 28 MB (28,087 KB) |
---|---|
Format | |
Downloaded | 682 times |
Last checked | 15 Hour ago! |
Author | অভিজিৎ রায় |
সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘যুক্তি’ পত্রিকার সম্পাদক অনন্ত বিজয় দাশ ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটি সম্পর্কে ফ্ল্যাপে লিখেছিলেন, ‘আধুনিক বিজ্ঞানের সর্বশেষ তত্ত্ব-তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে লেখা অবিশ্বাসের দর্শন বইটি বাংলাভাষী ঈশ্বরবিশ্বাসী থেকে শুরু করে সংশয়বাদী, অজ্ঞেয়বাদী, নিরীশ্বরবাদী কিংবা মানবতাবাদী এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানমনস্ক সবার মনের খোরাক জাগাবে। ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কার মুক্তির আন্দোলনের মাধ্যমে আগামী দিনের জাত-প্রথা-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেনিবৈষম্যমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখা মানুষের গণজোয়ারকে এই বই প্রেরণা জোগাবে’। সে প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে আমরা জানিনা, তবে বইটি যে বহু পাঠকের হৃদয়ে একটি স্থায়ী আসন তৈরি করে ফেলেছে সেটি বলাই বাহুল্য। ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং প্রথাগত ধর্ম নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা সমৃদ্ধ ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটি শুদ্ধস্বর থেকে প্রথমে প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র প্রথম দিনে। প্রথম সংস্করণের যে কয়টি কপি ছাপা হয় তা ২০১১ সালের মেলার প্রথম দশ দিনেই শেষ হয়ে যায়। বইয়ের চাহিদার কারণে মেলার শেষ দিকে দ্বিতীয় দফায় আবার ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বইটির প্রথম সংস্করণের অতিমূল্যের কারণে অনেক পাঠকের কাছে বইটি পৌঁছাতে পারছে না এই বিবেচনায় এবং ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় ২০১২ সালে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় পেপারব্যাকে। মাত্র এক বছরে পেপারব্যাকে ছাপানো সহস্রাধিক কপি নিঃশেষ হয়ে যায়। ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটি বাংলাভাষী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে পৌঁছুবে এমন একটা সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা লেখকদের মনে ছিলো না–তা নয়, কিন্তু বইটি সাধারণ পাঠকদের মাঝেও যে ভাবে আলোড়ন তৈরি করেছে তা ছিলো সত্যিই অপ্রত্যাশিত। অনেক পাঠক বইটি পড়ে জানিয়েছিলেন, প্রয়াত ড. হুমায়ুন আজাদের ‘আমার অবিশ্বাস’ বইটির পর ঈশ্বর-ধর্ম সংক্রান্ত এতো গভীর আলোচনাসমৃদ্ধ বই বাংলা ভাষায় আর প্রকাশিত হয় নি। অসাধারণ কাব্যিক ভাষায় লেখা ‘আমার অবিশ্বাস’ বইটি আমাদের দুইজন লেখকেরই প্রিয় বইয়ের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটিকে সে বইয়ের সাথে তুলনা আমাদের জন্য বিব্রতকর, কিন্তু সেই সাথে অনেক আনন্দ এবং গর্বেরও।
এলাম আমরা কোথা থেকে, কোথায়ই বা যাচ্ছি আমরা, এই অনন্ত মহাবিশ্বের সূচনা হল কীভাবে, এর শেষই বা কোথায়, এই মহাবিশ্ব তৈরি বা চালানোর পেছনে কী আছেন কোনো অপার্থিব সত্ত্বা?, তিনি কি আমাদের প্রার্থনা শোনেন এ প্রশ্নগুলো শতাব্দী-প্রাচীন চিরচেনা প্রশ্ন। প্রশ্নগুলো নতুন নয়। নানা ধরণের উত্তরসমৃদ্ধ বইও বাংলা ভাষায় কম লেখা হয় নি। তবে এ ধরণের অধিকাংশ প্রচলিত বইয়ে যুক্তির চেয়ে স্থান পেয়েছে অন্ধবিশ্বাস, বিজ্ঞানের বদলে স্থান পেয়েছে কূপমণ্ডুকতা। অবিশ্বাসের দর্শন বইটিতে আমরা সেই পুরনো ধারা অনুসরণ করিনি। চিরায়ত গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে আমরা বরং প্রশ্ন করেছি, পাঠকদেরও অনুরোধ করেছি ‘ক্ষতবিক্ষত হতে প্রশ্নের পাথরে’। সেই সাথে নির্মোহভাবে উপস্থাপন করেছি এই অন্তিম প্রশ্নগুলোর রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক অর্জনগুলো। এই চিরচেনা প্রশ্নগুলোর উত্তর সন্ধানে বিজ্ঞানের অর্জন স্থান পাওয়ায় তা চুয়াডাঙ্গা থেকে সুদূর আইসল্যান্ড প্রবাসী বাংলাভাষী বহু বিজ্ঞানমনস্ক পাঠকের মনে আলোড়ন জাগিয়েছে। বইটি প্রকাশের পর থেকে অসংখ্য মানুষ ফোন, ইমেইল, ব্লগ, ফেসবুক, টুইটারে তাদের মতামত জানিয়েছেন। বিজ্ঞান, মুক্তচিন্তা, সংশয়বাদ এবং যুক্তিবাদ নিয়ে বাংলায় প্রকাশিত যে সমস্ত বই বাজারে আছে, তার মধ্যেও অগ্রগণ্য বই হিসেবে পাঠকেরা অবিশ্বাসের দর্শনকে স্থান দিয়েছেন। কোনো ধরনের প্রচারণা ব্যতীত ফেসবুকে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বইটিকে পছন্দ করেছেন, অনেকেই রেখেছেন তাদের প্রিয় বইয়ের তালিকায়। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গর্বের ব্যাপার। ফেসবুক ছাড়াও টুইটার, ব্লগ, বইয়ের ওয়েবসাইট গুডরিডস ডট কম সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে পাঠকেরা বইটি সম্পর্কে তাদের মতামত জানিয়েছেন। বাংলা উইকিপিডিয়ার নিবন্ধসহ বেশ অনেক ধরনের নিবন্ধ/প্রবন্ধে মুক্তমনা লেখকেরা বইটিকে উদ্ধৃত করেছেন। বিগত বছরগুলোতে বইটি নিয়ে বেশ কিছু মূল্যবান আলোচনা প্রকাশিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে। যেমন, অবিশ্বাসের দর্শন বইটির একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা স্থান পেয়েছিল সুসাহিত্যিক আহমদ মাযহার সম্পাদিত ‘বইয়ের জগৎ’ পত্রিকার নবম সংখ্যায়। নৃবিদ্যার ছাত্র এবং সাহিত্য সমালোচক শফিউল জয়ের করা সেই শিরোনাম ছিল ‘অবিশ্বাসের দর্শন: যৌক্তিকভাবে মনকে জাগানোর ঐকান্তিক প্রয়াস’ ।সেই রিভিউটিতে শফিউল জয় ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটিকে বাংলা সাহিত্যের জগতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বই হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, এবং রিভিউটি সমাপ্ত করেছিলেন এই বলে– ‘প্রতিক্রিয়াশীল আর অবৈজ্ঞানিক ধর্মগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অসুস্থভাবে মন জুগিয়ে এসেছে মানুষের, এখন না হয় মন আমাদের যুক্তির আলোয় জেগে উঠুক’। শফিউল জয়ের এই ঐকান্তিক কামনা যেন আমাদের প্রত্যাশারই নান্দনিক প্রকাশ।
বইটির আরেকটি মূল্যবান রিভিউ করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পদার্থবিজ্ঞানী এবং সুলেখক ড. প্রদীপ দেব। মুক্তমনা ব্লগে প্রকাশিত ‘অবিশ্বাসের দর্শন: নবযুগের যুক্তিবাদীর দৃপ্ত পদক্ষেপ’ শিরোনামের এ রিভিউটিতে প্রদীপ দেব যে কথাগুলো উল্লেখ করেছিলেন তা আজও আমাদের জন্য নির্মল আনন্দ এবং অফুরন্ত প্রেরণার নৈমিত্তিক খোরাক -
'পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ প্রচলিত ব্যবস্থার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু খুব সামান্য সংখ্যক কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ আছেন যাঁরা পৃথিবীটাকেই বদলে ফেলার চেষ্টা করেন। দিনের পর দিন নিরলস সংগ্রাম চেষ্টা পরিশ্রম অধ্যবসায় দিয়ে পৃথিবীটাকে একটু একটু করে ঠিকই বদলে ফেলেন এই ব্যতিক্রমী মানুষেরা। অথচ তার সুফল ভোগ করেন সবাই যাদের মধ্যে তাঁরাও আছেন যাঁরা ক’দিন আগেও এ পরিবর্তনের ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন। ধর্মবাদীদের সাথে মুক্তমনাদের পার্থক্য এখানেই যে ধর্মবাদীরা বড়...”