ঢাকা:পঞ্চাশ বছর আগে
(By হাকিম হাবিবুর রাহমান) Read EbookSize | 23 MB (23,082 KB) |
---|---|
Format | |
Downloaded | 612 times |
Last checked | 10 Hour ago! |
Author | হাকিম হাবিবুর রাহমান |
১৯৪৫ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রে উর্দু ভাষায় প্রচারিত কথিকা-সিরিজ ‘ঢাকা আজছে পাচাশ্ বারস্ পহেলে’ ছিল হাকিম হাবিবুর রহমানের নিজের প্রত্যক্ষ করা ঘটনার ধারাভাষ্য। ১৯৪৯ সালে তত্কালীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিম উদ্দিনের উদ্যোগে লাহোর থেকে ওই কথিকা ‘ঢাকা পাচাশ্ বারস্ পহেলে’ নামে উর্দু ভাষায় মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হয়। ওই পুস্তকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশক অর্থাৎ বর্তমান সময় থেকে প্রায় ১২৫ বছর আগের ঢাকার সমকালীন সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি প্রভৃতির এক প্রামাণ্য বিবরণী হাকিম হাবিবুর রহমানের বর্ণনায় বিধৃত হয়েছে। এই পুস্তকে সমকালীন ইতিহাসের এমন অনেক ঘটনার ও বিষয়ের প্রাণবন্ত উল্লেখ রয়েছে, যা সচরাচর প্রাপ্ত ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়নি। সেদিক থেকে এই পুস্তকটির গুরুত্ব অপরিসীম। ড. মোহাম্মদ রেজাউল করিম মূল উর্দু ভাষা থেকে বইটিকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন। ঢাকা পাচাশ্ বারস্ পহেলে পুস্তকে বর্ণিত ১৬টি অনুচ্ছেদে যথাক্রমে ইতিহাসের দৃষ্টিতে ঢাকা, ঢাকার শিল্প (মসলিন), টুপির কাহিনী, রমজানের আগমন, ঢাকার রুটি, খাদ্য পরিবেশন, ঢাকার বিশিষ্ট খাবার, প্রসিদ্ধ খাবার, মিষ্টান্ন, পেশা, কুস্তি ও ব্যায়াম, খেলাধূলা, সংগীত, মেলা-পার্বণ, তবলা ও গান এবং হুক্কা, পান, চা প্রভৃতি সম্পর্কে বিবরণ রয়েছে । হাকিম সাহেবের নাতি সাদ-উর রহমান সম্প্রতি লিখেছেন ঢাকার খাবার নিয়ে একটি বই—‘ঢাকা রসনা বিলাস ও খাদ্য সংস্কৃতি’ ।
গ্রন্থটিতে ১৮৯৫ সালের ঢাকার ইতিহাস, সমাজ-সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা সম্পর্কে হাকিম হাবিবুর রহমানের নিজের প্রত্যক্ষ করা ঘটনার ধারাভাষ্য স্থান পেয়েছে। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ।
হাকিম হাবিবুর রহমান (১৮৮১-১৯৪৭)
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ঢাকা শহরে হাকিম হাবিবুর রহমান ছিলেন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধু ঢাকার একজন ভালো চিকিৎসকই ছিলেন না, ছিলেন রাজনৈতিক নেতা, ইতিহাসবিদ, সাহিত্যসেবী ও সমাজকর্মী। ১৮৮১ সালের ২৩ মার্চ ছোটকাটরায় হাকিম হাবিবুর রহমানের জন্ম। তাঁর পিতা মাওলানা মুহম্মদ শাহ পাকিস্তানের পেশোয়ার থেকে জীবিকার অন্বেষণে ঢাকায় আসেন এবং নওয়াব আহসান উল্লাহর এস্টেটে চাকরির সুবাদে ঢাকায় স্থায়ী হন। হাবিবুর রহমান ঢাকা সরকারি মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর কানপুরে হজরত আশরাফ আলী থানভীর (র.) কাছ থেকে আরবি ব্যাকরণ এবং লক্ষ্নৌ, দিল্লি ও আগ্রা থেকে ইউনানি চিকিৎসায় জ্ঞানার্জন করে ১৯০৪ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় এসে ইউনানি চিকিৎসা শুরু করার পর চিকিৎসক হিসেবে এত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন যে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৯ সালে তাঁকে ‘শাফাউল্ মুলক’ উপাধিতে ভূষিত করেন। মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী হাকিম হাবিবুর রহমান নওয়াব সলিমুল্লাহর একজন রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন, পাশাপাশি তিনি গ্রন্থ রচনায়ও মনোনিবেশ করেন, তাঁর সব গ্রন্থই ছিল উর্দু ভাষায় রচিত। অনেক লেখার মধ্যে ঢাকা সম্পর্কিত তাঁর দুটি বিখ্যাত বই হলো—আসুদগান-এ-ঢাকা (ঢাকা-১৯৪৬) ও ঢাকা পাচাশ্ বারস্ পহেলে (লাহোর ১৯৪৯)। এ ছাড়া তাঁর কিছু অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রক্ষিত আছে। ঢাকায় উর্দু সাংবাদিকতায় তিনি ছিলেন একজন পথিকৃৎ। ১৯০৬ সালে ঢাকা থেকে তিনি ‘আল মাশরিক’ নামের একটি উর্দু মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং ১৯২৪ সালে খাজা আদেলের সঙ্গে যৌথভাবে ‘জাদু’ নামের অন্য একটি মাসিক পত্রিকাও প্রকাশ করেন। ১৯৩০ সালে তিনি ‘তিব্বিয়া হাবিবিয়া কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ইউনানি মেডিক্যাল কলেজ। উল্লেখযোগ্য হারে তিনি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন, ১৯৩৬ সালে তিনি স্বর্ণ ও রৌপ্য মিলিয়ে মোট ২৩১টি পুরনো মুদ্রা ঢাকা জাদুঘরে দান করে যান। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে ১৯৯৪ সালে ‘হাকিম হাবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। চার পুত্র ও দুই কন্যার জনক হাকিম হাবিবুর রহমান ১৯৪৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করেন এবং আজিমপুর দায়রা শরিফে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয় ।”